নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বর্তমান প্রেক্ষিত


স্বপ্নসারথি ডেস্কঃ প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৩, ১০:৩৪ PM / ৩১৪
নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বর্তমান প্রেক্ষিত
 আবু রাসেল
পৃথিবীতে মানুষরূপে জন্ম নিলেই সে প্রকৃত মানুষ হয় না। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সমাজ, রাষ্ট্র সর্বপরি সে তার পরিবারের নিকট হতে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা অর্জন করে। সৎ মানুষ অথবা মানুষের মত মানুষ হওয়ার প্রথম পাথেয় হিসেবে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকেই সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে।
আমাদের পৃথিবী নামক এই গ্রহে কালে কালে মহামানব ও মহাপুরুষের আর্বিভাব ঘটেছে। তাঁদের সকলের জীবনকালে জীবনযাপনের মান, বাস্তব জীবনে চলাফেরা সর্বপরি তাঁদের কর্মপন্থা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং বিচারিক ক্ষমতা সকল কিছুর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ছাপ অবলকন করা যায়।এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষণজন্মা ব্যক্তি ও শাসক ছিল বিতর্কিত। যে মুহূর্তে তাদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছিল। সে মুহূর্তে অথবা পরবর্তী সময়ে তারা পৃথিবীর বুকে তাদের নামটিকে নিন্দিত ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পাইয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। যেমন হিটলার। নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং অনুসৃত জীবনের প্রতিফলিত রূপকেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। মানব জীবনে চলার পথে দেশ, জাতি তথা সমগ্র বিশ্ব সভ্যতাকে সুন্দর, সাবলীল ও পরিপাটি রূপে পরিচালনার পাশাপাশি সমগ্র সমাজ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে চলতে গেলে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োগ অতীব জরুরি। এর ব্যতয় অথবা নৈতিকতার অবক্ষয় হলে সবকিছু নিমেষের মধ্যে ধ্বংস হতে পারে। সেক্ষেত্রে সকলে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আস্থার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান করে কাজ করতে হবে। হবে কেনো বলছি করা উচিৎ।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলে আদর্শ সমাজ তথা রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা সম্ভব। তবেই অন্যায়, অবিচার, দাংগা ও হাংগামা থাকতে পারে না। বর্তমানে ঘুনে ধরা সমাজে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বড় অভাব। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। এখন সময় এসেছে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্রকে সংস্কারের মধ্য দিয়ে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার। একইসাথে চলার পথে সত্য-মিথ্যের বিচার করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার। কর্মক্ষেত্রে আস্থা ও নির্ভরতা বাড়াতে প্রয়োজন নৈতিকতা ও মূল্যবোধের। সমাজ জীবনে একে অপরের সাথে সততার সহিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা উচিৎ। সর্বক্ষেত্রে মানব সমাজে কলহ দূরীকরণ ও দূরভীত করতে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
কালের পরিক্রমায় সমাজ তথা রাষ্ট্রের সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। যা আমাদের মানব জীবনের জন্য হুমকি দাঁড়িয়েছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ- বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদীদের আধিপত্য, গ্রামীণ জীবনের বাঁধ ভেঙে শহুরে জীবনে প্রবেশ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পারস্পরিক অবিশ্বাস তথা ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা, মহাপুরুষদের আর্দশ অনুসরণ না করা, পরিবার তথা সমাজ জীবনের অভিভাবকদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়া। সর্বপরি নৈতিকতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ত্যাগ, সংযম, ধৈর্য্য, সততা, উদারতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়নতা ও কর্তব্যপরায়নতার অভাব বোধ করা যাচ্ছে সর্বদা। প্রকৃত জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগের অভাবে কল্যাণকর ও জনস্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের কৃষ্টি কালচার অনুসরণ করার প্রবনতা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য হুমকি স্বরূপ। উচ্চশিক্ষিতদের ব্যাপক হারে দুর্নীতি ও ব্যক্তি কেন্দ্রিক চিন্তাচেতনার নগ্ন প্রয়োগ। নৈতিক মূল্যবোধের ফলে সকলে সকলের জীবনকে সুখী, সুন্দর, সাবলীল ও মসৃণ করে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে বিদ্যাই যথার্থ নয়, প্রয়োজন সুশিক্ষা। ইতিহাসের কোন বিদ্যাপাঠে অথবা বিদ্যালয়ে ভ্রান্ত পথের কোন নির্দেশনা নেই। তবুও মানুষরূপী অমানুষেরা সর্বত্র দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। বিদ্যা বলতে শুধুমাত্র পুঁথিগতবিদ্যাকে বুঝায় কিন্তু একে বিকশিত করে চেতনায় প্রস্তুত করতে চাই মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের পথে যা আজ বড় অভাব। এজন্যই চেতনাপূর্ণ অক্ষর জ্ঞানহীন কিছু কিছু মানুষ নৈতিকতার সাথে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে যদিও তার কোন পুস্তক পড়া নেই। তাই সকলের চাওয়া হতে হবে সঠিক মানুষের মত মানুষ হব সুশিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করব।
বর্তমানে সমাজে অতিমাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ পরিবেশ, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই ব্যক্তিবর্গের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। দেশ ও জাতিকে হতাশায় নিমজ্জিত করে ভয়াবহ পরিনাম ডেকে আনছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সমাজের বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, একক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘুম, ধর্ষণ নারী ও পুরুষ নির্যাতন দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন চোখে পড়ে নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত অসংখ্য খবর। মনে হয় যেন সারাবিশ্ব গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে চলছে। অপরদিকে এক শ্রেণির নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত তথাকথিত দেশপ্রেমিক নামধারী সুশীল সমাজের কিছু উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ও কর্মকর্তা সজ্ঞানে তামাশা করার পাশাপাশি চরম দালালি ও নগ্ন চাটুকারিতায় মত্ত। দেশ ও জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছানোর স্বার্থে নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে সদা জাগ্রত রাখা আবশ্যক।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে মানুষকে সচেতন করার সঠিক চেষ্টা করা একান্ত প্রয়োজন বটে। এ জন্য সমাজের সকল স্তরে ন্যায়নীতি ও সত্য শিক্ষা দিতে হবে। সুশাসন ও সুযোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে আবশ্যিকতা রয়েছে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে। দেশমাতৃকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সুশাসনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যায় ও ইনসাফের পথে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ন ও কর্তব্যপরায়ন সাহসী প্রশাসক এ ক্ষেত্রে খুব দরকার। তবেই জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র স্ব-সম্মানে, স্ব-গৌরবে আমরা মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব পৃথিবীর বুকে।